Sunday, September 22, 2019

ঈশানী বসাক






ছবি-লেখক 

ডায়েরি

রোজ ডায়েরি লিখি বলে যে মেয়েটা চলে গেল ঘর থেকে তার ডায়েরির সব পাতা সাদা। তারিখ সময় লিখে রাখা প্রতিটা পাতায়। আপনি বললেন লেখেন .....
আসলে কী জানেন লিখি । পাতা খুলে আঙুল বোলাই , কথা বলি ওই কুড়ি লাইন আর আনুমানিক দুশো শব্দদর্শকের সিটগুলোর সঙ্গে। ওঁরা এখন ভেঙে পড়া অ্যাম্ফিথিয়েটার। খোলা ছাদের তলায় লড়ছে মোরগ , মহিষ। কে বলে উঠছে আমি তো শুধু জানি তোমার চোখ একটা মহিলার মতোই সুন্দর। কারা যেন বলছে একটা জেলখানার থেকে খাটাপায়খানার গন্ধ বেশি ভালো। তাতে কারা বাহবা দিচ্ছে না জেনে। কবিপ্রবর মোসাহেবদের বললেন হেসে, কুকুর পায়ুদেশের গন্ধ শুঁকে বলে দেবে প্রেমিকার মন। তাই ভালবাসতে হলে ঘাম ছেড়ে চলে এসো একহাত মাপের আকাশ দেখা এই শৌচালয়ে।
আমি বললাম এসব কী বলছেন ? আসলে কী জানেন মেয়েটি হাসলো । আমরা যা ভাবি তা লেখার শব্দ নেই। আমাদের চর্ব চষ্য লেহ্য পেয় মনটা সোশাল নয়। এই যে সাদা পাতা দেখছেন এখানে তারিখ সময় লেখা।  এই সময়েগুলোকে  ঘেন্না করবো বলে লিখেছি। আমি মনে করি শব্দবাজি পোড়ালে কাগজ বাঁচবে। মশাই আসলে শব্দ মানে ঠগবাজ আর আমাদের পাতারা এসবের পাঠক।

ছবি- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়


টেথিস

এক

মেঘেদের উপর থেকে দেখবো এমন ইচ্ছে নিয়ে স্কুলের আঁকার খাতায় ঘাসের উপর ভাসিয়ে দিয়েছি আকাশ। চিরকালীন বাঘ বনে বেরিয়ে হাত ধরে নিয়ে চলে সেইসব শীতল বাতাসের কাছে।
-ওই দেখ , ওই যে কাঞ্চনজঙ্ঘা।
শুটিং -য়ের লক্ষ্যভেদী চোখ ধরে ফেলে ঈশ্বরকে ধূপগুড়িতেই। বাইরে তখন ট্রেনের দরজায় রঙ চেনাচ্ছে প্রকৃতি। আর্টিস্ট কেক কালারের গাঢ় কমলা , বেগুনি রঙের ভার্সানে ক্ষেতের সবুজ ফসল হতভম্ব। এমন সব ছবির সামনে দূরপাল্লার গাড়ি থামেনি। মোবাইলের স্পোর্টস মোডে নড়ে যাওয়া রঙ্গোলি।
কাশতে কাশতে গলার কাছে মাফলার শক্ত হতে থাকে। বুঝি শ্বাসনালিতে চাপ পড়ছে লালচে কড়াপাক ঠান্ডার। দৌড়ে নেমে চা এনে দিয়েছে ছেলেটি। আমি আরামের নিঃশ্বাসে মিশে না থেকে সিটে মাথা রাখি। সারারাত জেগে থাকা ভুলে একটা কাফ সিরাপ শেষে জানলার ভোর বড়ো ক্লান্ত। গুলি ট্রেন থামতেই ছেলেটিকে নিয়ে এগিয়ে যায়। বোলেরোর প্রচন্ড হাওয়া। এগিয়ে আসছে জঙ্গল। দুদিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ রঙের চোখ। কলকাতার রাস্তায় মরে যাওয়া কাঠবিড়ালিটা ছুটছে এ গাছ থেকে ও গাছ। আমরা ঈশ্বরের কাছে যাচ্ছি। আমার ছবির খাতার মেঘেরা মাটির কাছে নেমে আসছে। হাত পিছলে পড়ে যাচ্ছে তিস্তা। পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে নদী পাশ ফিরে শুয়ে থাকে।


ছবি- অর্ণব বসু 


- ও নদী রে একটি কোথা শুধাই আমি তোমারে
বলো কোথায় তোমার দেশ?
বাগরাকোটের রাস্তায় কাশিমবাজারের সাদা থাম। আমরা পাখির ডানা হয়ে ছুটি সেই ব্রিজে। নদী সরে যেতে যেতে বলে , খোদা হাফেজ।

ছবি- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

থোড়া চায়ে পি লিজিয়ে, ইসকে বাদ থোড়া খরাব রাস্তা ...
ভার্টিগো নিয়ে গুলি জানলার ধারে। আরেকজন তখন ঘুমে। আমরা দুজন ডাকাডাকি করতে সে চোখ খুলে দেখলো চারিদিক। ঘন নীল আকাশ আর নীচের গভীর শূন্যতা তার মুখ থেকে বের করে আনলো ইটারনাল। পথ ভোলা বাচ্চারা হলুদ, সবুজ শার্টে। স্কুলের এই জামায় ফুটবলের মাঠ। আজকে খেলা কালিঝোরা আর লাতপাঞ্চারের। মাইকে যে ভাষায় অ্যানাউন্স তা বুঝিনা। শুধু জানি বাচ্চারা খাদের ধারে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গুলি অবাক, যদি বল পড়ে যায়। সমুদ্র চিরকাল বেপরোয়া, ওসব সব অভ্যেস আছে ওদের। যে কুকুরটা আমাদের সঙ্গে এসেছিলো সিঁড়ির পাশে শুয়ে রয়েছে দুপুরটা। ওকে আদর করতে করতে বারান্দাতে ঘুমিয়ে পড়েছি। দুটো ঘরে তখন নেশার ঘোর। ডানহিল আর চিপস, মেঘ আর রোদ। তিস্তার উপর যে কুয়াশা তার ছিঁটেফোঁটা নিয়েই তিস্তাপারের বৃত্তান্ত। গুলি জল না দেখতে পেলে ভয় পায়। হারানোর ভয়। আকাশ জুড়ে শুধুই স্বপ্ন , একটা ট্রেনের হলুদ রঙের কম্পার্টমেন্ট, মন্দিরের রক্তজবা, হিথক্লিফের হা হা হাসির শব্দ। সমুদ্র খুব শান্ত হয়েছে আজকাল । ওই দূরে সমস্ত পাহাড় একসঙ্গে ঢেউ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের ভেজার স্বপ্নে অনেকটা মেঘ। টেথিসকে ভুলে যেতে কেউ পারেনি, পাহাড় ও নয়।



ছবি- অর্ণব বসু 

No comments:

Post a Comment