উত্তরপত্র (postscript)
“সখি, ভাবনা কাহারে বলে?” প্রশ্নের
উত্তর বেরুচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। এবং একতরফা। কারণ, ভাবনা
সম্বন্ধে আমার কোন বক্তব্য নেই। ভাবনা কাকে বলে আমি জানিনা। জানলে আর প্রশ্ন করব কেন? ভাবনারা আমার ত্রিসীমানায় ঘেঁষে না। সীমানা গুজবমাত্র। আসলে নেই। দেশ, কাল সব মিলেমিশে একাকার। একা। কার?
আমার স্মৃতিও
দুর্বল। কার অনুমতিক্রমে যে জন্মেছিলাম, তা আজ আর মনে পড়ে না। দুর্বল এবং
খ্যাপাটে। চোর-ডাকাত-গুন্ডা-বদমাশদের সঙ্গে ঘুমোনোর অভ্যাস আছে তার। অভ্যাস আছে হিমালয়ের হৃদয় থেকে কোমলতা আহরণ করারও। তাতে কি আসে
যায়? সব ফক্কিকার। উন্মাদের পাঠক্রম অনুসরণ করা আর খিদে পেলে উঞ্ছবৃত্তি।
সন্দেহ যে
একেবারে হয় না, তা নয়। হয়, তবে শুধু সূর্যাস্তের পরে। এবং মাত্রা রেখে। রোহিতাশ্বের
হ্রেষাধ্বনি থেকে আমি যা বুঝেছি, তা কি ঠিক? অথচ সে তো কাউকে ফাঁকি দিতে চায়নি! কেবল
সহিসের ছপটি খেয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়োনোর বদলে ডানা মেলে উড়তে চেয়েছিল। তা, আজকাল আকাশে যা যানজট, মন! যেদিকে তাকাও, শুধু
ড্রোন আর ড্রোন!
রাত খুব গাঢ় হয়। ঝিঁঝিঁরা ঘুমিয়ে পড়ে, অস্ত যায় চাঁদও। চোখ খোলা রাখে শুধু সতর্ক সময়। আর আমি জেগে থাকি সন্দেহকে ছুটি দিয়ে অন্যবিধ বিচিত্র প্রয়াসে। গাছকে প্রিয়ার কথা মধুগুণে বলি। বলি,
“দুধে-ভাতে থেকো সন্তানবেষ্টিতা। উর্বর মৃত্তিকা পাও মৌলিক অন্বেষে।” স্বর্গরাজ্যে অনুরূপ মাটি আছে, চোরাবালি নেই।
ভালোবাসা
মানুষকে ছেড়ে গেলে শূন্য থেকে শূন্যতর অভিজ্ঞান আঁকড়ে পড়ে থাকা যায়। শূন্য - অখণ্ড মণ্ডলাকার - যেদিক থেকেই দেখ না কেন, কোন
প্রভেদ নেই। তা, ক্রমবর্ধমানতা মহাশূন্যের প্রকৃতিগত গুণ তো বটে। তাকে অস্বীকার
ক’রে আমরা নিজেদেরই আহাম্মক প্রতিপন্ন ক’রে চলেছি দিনের পর দিন। সামনে নদী। বর্ষায় স্ফীতকায়া। ওপারে যারা ভিড় করেছে, তাদের
এপার থেকে চেনা যাচ্ছে না।
ছাই দিয়ে ঘর
বানাতে পারলে সে ঘর আর পুড়তো না। কিন্তু ছাই বড় ঝুরঝুরে - আঁট নেই, ভার
নেই, শক্তি নেই কোন। নির্মাণ-প্রকল্পে মোটে উপযোগী নয়। হাওয়া পেলে কেবল সে উড়ে যেতে জানে। অপ্রসন্ন কাঠ, খড় - মানুষেরই মতো যেন - পুড়ে যেতে জানে। জন্মাবধি জানে
দেহ পঞ্চভূতে একদিন মিশে যাবে ঠিক। তারই মাঝে কিছুকাল পরিজন, অট্টালিকা, নাম-খ্যাতি, বৈদ্যুতিন
উত্তেজনা, আরাম যান্ত্রিক।
জীবদ্দশায়
যাদের সঙ্গে পরিচয় হ’লো না, তাদের মরণোত্তর নমস্কার জানাই। কিন্তু অত সহজে তোর নিষ্কৃতি নেই। তোকে এখন থেকে প্রশ্নপত্র সাজিয়ে দেব প্রতি সংখ্যায় উত্তর লেখার জন্য। রীতিমতো test papers ভেঁজে যাতে পরীক্ষায় বসতে পারিস টগবগায়মান আত্মপ্রত্যয়ের
তুঙ্গে চেপে। বিলকুল নির্ভাবনায়। অন্যের খাতা কি চোথা থেকে টোকার দরকারই হবে
না।
“মরণোত্তর” বললেই তো হ’লো না! কার মরণ? কিসের উত্তর? প্রথম প্রশ্ন:
অপসৃলে নীর হ’তে মীনে,
(কহো দেখি,)
মৃত্যু সে মাছেরই শুধু, জলেরও
নহে কি?
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
অরোরা, ইলিনয়
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete