দেশে ফেরার খাতা
পেস্ট্রির গায়ের রঙ গাঢ বাদামী।
কালচে বলাই ঠিক হবে। তার ঠিক ওপরে গোলাপি ক্রীম পুরু করে লাগানো। সেই ক্রীমের ওপর,
ঠিক মাঝখানে, একটা লাল টুকটুকে চেরি। রিয়া পেস্ট্রিটা দু আঙ্গুলে সাবধানে তুলে একবার
মুখের কাছে নিয়ে আসে। সুবিনয় লক্ষ্য করে রিয়ার ঠোঁটদুটো অল্প ফাঁক হয়ে আছে। সেই ফাঁক
দিয়ে দুই সারি মুক্তো একবার ঝিলিক দিয়ে ওঠে। সাদা মুক্তোর ওপরে আর নিচে গাঢ় লাল লিপস্টিকের
সীমারেখায় চোখ আটকালো সুবিনয়ের।
রিয়া ঠিক ওইভাবে ঠোঁটের কাছে পেস্ট্রিটা তুলেই এবার নিয়ে এলো নিজের নাকের সামনে।
চোখ বুজে ঘ্রাণ নিতে নিতে এমনভাবে শ্বাস টানলো যেন সে এই মুহূর্তের সবটুকু স্বাদ, তার
গন্ধ, তার রঙ, তার সুখ, সবকিছু একসাথে শুষে নিতে চাইছে। পা থেকে তলপেট অবধি একবার শিরশির
করে উঠলো সুবিনয়ের। রিয়া আবার পেস্ট্রিটা নিজের ঠোঁটের কাছে নিয়ে এসেছে। আবার তার গাঢ
লাল ঠোঁট অল্প ফাঁক হচ্ছে। এই বারবার করে বন্ধ হওয়া, আবার খুলে যাওয়া, আবার ফাঁক হওয়া,
ফের বন্ধ হয়ে যাওয়া; নিজের অজান্তেই এর দিকে চোখ আটকে যাচ্ছে বিনায়কের। রিয়ার ঠোঁট
এবারে আর একটু বড় করে খুলে গেল। এখন তার সাদা ঝিলিক দেওয়া দাঁতগুলো শুধু নয়, তার হাঁমুখের
ভেতর গোলাপি গিভ, তার লালচে আভা, এমন কি দুচার বিন্দু লালাও, সুবিনয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
রিয়ার হাঁমুখটা খুব বড় নয়। সুবিনয় দেখল সেই হাঁমুখের গভীর থেকে বেরিয়ে এসে রিয়ার জিভটা,
পেস্ট্রির ওপরে যে লাল টুকটুকে চেরি বসে আছে তাকে আলতো ছুঁয়ে দিয়ে, দুই সারি দাঁতের
মধ্যে নিয়ে নিল তাকে। এবারে সে একটু একটু চাপ দিচ্ছে চেরিটাকে। জিভ দিয়ে ঠেলছে আর চাপ
দিচ্ছে দাঁত দিয়ে।
সুবিনয় চোখটা বন্ধ করে ফেলে। বুঝতে পারে, তার তলপেটের ঠিক নিচে, বুনো কালচে ঘাসের
আড়ালে যে লাউডগা এতক্ষণ শিথিল হয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল, সে এখন জাগছে। আশীবিষ বড়
ইশারাকাতর। সামান্য সংকেতেই সে জেগে ওঠে। ক্ষুধায় না ভয়ে, সুবিনয় জানে না। সুবিনয় চোখ
বুজেই শ্বাস টানে। লম্বা একটা শ্বাস। সেই হাওয়া চলাচলের সাথেসাথেই তার অন্ডকোষদুটি
শক্ত হয়ে ওঠে। লাউডগাটা এইবার টান টান হয়ে নিজেকে প্রসারিত করছে। মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে
তার আকার, তার রূপ। যেন শঙ্খচূড় ফণা ধরবে এইবার। প্যান্ট, জিপার, পোষাকের, সামাজিক
আড়ালে তাকে আর ধরে রাখা যাচ্ছেনা। পেশী, স্নায়ু, শিরা্ সব একসঙ্গে, একটা বড় ঢেউয়ের
মত ফুলে উঠছে, স্ফীত আর কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই তার হাতদুটো রিয়াকে এক ঝটকায়
কাছে টেনে নিয়ে, তার ঠোঁটের মধ্যে নিজের ঠোঁটটাকে গেঁথে দেয়। আর তার অবাধ্য জিভ অত্যন্ত
দ্রুততায় ডুবে যেতে থাকে রিয়ার মুখগহ্বরের ভেতর। রিয়া বাঁধা দেয় না। দু আঙ্গুলে ধরা
পেস্ট্রিটাকে নামিয়ে রাখে প্লেটের ওপর। হাতটা নামিয়ে আনে সুবিনয়ের প্যান্টের জিপের
কাছে। আঙ্গুলগুলো হঠাৎ চঞ্চল হয়ে ওঠে তার। কি যেন খুঁজছে সে। উন্মাদের মত। টান মেরে
জিপটা খুলতে গেলে সেটা আটকে যায় মাঝপথে। রিয়ার ত্বর সয় না যেন। সে এক ঝটকায় সুবিনয়ের
প্যান্টটাই দুহাতে টেনে নামিয়ে দিয়ে দু হাতে চেপে ধরে তার পুংদণ্ডটিকে। ততক্ষণে সে
দণ্ড এতটাই লম্বা, পুরুষ্টু আর স্ফীতকায় হয়ে উঠেছে যে রিয়ার চখ বিস্ফারিত হয়ে ওঠে।
বড় বড় চোখে সেই দিকে তাকিয়ে সে একবার কী যেন বলতে চায়। তার গলা দিয়ে একটা ঘড়ঘড় স্বর
ওঠে শুধু। পরক্ষণেই সে মাটিতে বসে পড়ে হাঁটুমুড়ে। দণ্ডটি দু হাতে টেনে নিয়ে ঢুকিয়ে
দেয় নিজের মুখের ভেতরে। সেই নরম উষ্ণ অন্ধকারে প্রবেশ করার মুহূর্তে দণ্ডটি তিরতির
করে কাঁপতে থাকে। রিয়া চোষে। রিয়া জিভ দিয়ে তাকে চাটে। রিয়া বুক ভরে তার গন্ধ নেয়।
আলতো করে দাঁত বসায় তার গায়ে। সুবিনয় অনুভব করে, আস্তে, খুব আস্তে, একটু একটু করে পাতালে
নামছে। শুধু এই পাতালপ্রবেশ, এই বেহাল পতন, বড় সুখের। সব ব্যর্থতা ভুলিয়ে দেওয়া, বড়ো
সুখের।
তবু, চকিতে একবার মনে হয় তার,
এই কয়েক মুহূর্তের সুখ, হয়ত তত বড়ও নয় তা। যতটা বড় হলে তার একজীবনের যত অপমান আর পরাজয়
সে ভুলে যেতে পারে। কিছুটা ওই সব পরাজয় ভুলে যাওয়ার জন্যেই যেন, কোনও এক অজানা নির্মমতায়
সে রিয়াকে আরও জোরে কাছে টেনে নেয়। অন্ধ এক উন্মত্তায় রিয়াকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে ঢুকিয়ে
দেয় তার হাঁমুখের ভেতর।
ঠিক সেই মুহূর্তে নীচের রাস্তায় যে বড়ো কফি শপটা ঝলমলে আলো জ্বালিয়ে
সন্ধ্যের খদ্দেরদের জন্যে অপেক্ষা করছিল, দুটো লোক সেখানে এসে বসে। তাঁদের একজনের বয়স
অন্যজনের থেকে বেশ কিছুটা বেশি। চুল প্রায় নেই। যে কটি আছে সেগুলোও নেতিয়ে পড়েছে কপালের
ওপর। চোয়াল দুটো ভেতরে ঢোকা। চোখদুটো ঊজ্জ্বল, কিন্তু কোটরে বসে গেছে। লোকটার গায়ে
একটা ছেঁড়াখোঁড়া ওভারকোট। চোখের দৃষ্টি দেখলে বোঝা যায় সে যেন সবসময় কোনও এক আতঙ্কের
হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। কোন ভয় তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সে জানে না। শুধু জানে
তাকে পালাতে হবে। অন্যমনস্কভাবে সে হাতের আঙ্গুল নিয়ে টানতে থাকে।
অন্য লোকটার বয়স কিছুটা কম। হঠাৎ
দেখলে মনে হবে সে যেন সবসময় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে আছে। কেমন ভ্যাবাচাকা খাওয়া মুখ তার।
চোখদুটো করুণ। শান্ত, কিছুটা যেন নিরীহ। আর তার ঠোঁটের কোণে একটা বিপর্যয়ের হাসি সারাক্ষণ
সেঁটে আছে।
বসতে বসতে প্রথম লোকটা কথা বলে
ওঠে। কাজটা তুনি ঠিক করনি মাল্যবান।
কোন কাজটা? অন্য লোকটা বলে।
ওই যে যেটা করছো এখন। বলতে গিয়ে
লোকটা ত্যারছা ভাবে রাস্তার উলটো দিকের বাড়িটার জানলায় তাকায়।
অন্য লোকটা একটু অস্থিরভাবে নড়ে
বসে। তারপর কিছুটা বিরক্ত আর কিছুটা নির্লিপ্ত হয়ে তাকায় বুড়ো লোকটার দিকে।
বয়স্ক লোকটা বলে, দুটোই মাত্র
সত্য আছে মানুষের জীবনে। এক, তার শরীর। যার ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কাম, আমরা সকলেই চিনি।
দুই, নিঃসঙ্গতা। যাকে আমরা কিছুটা চিনি, আর বেশিটাই চিনি না। যার সাথে মুখোমুখি হলে
আমরা এড়িয়ে যেতে চাই। যে আমাদের অন্ধকারে কাছে টানে, দম আটকে মারে। রাস্তা দেখায় না।
অন্য লোকটা এবার বেশ বিরক্ত হয়।
একটু ঝাঁজিয়ে উঠেই বলে, ফিওদর, আপনি একটা চিটিংবাজ এর মত কথা বলছেন। মিশকিন আর রাস্কলনিকভ
এর সঙ্গে আপনি পরিচয় করিয়ে ছিলেন বলে এখনো কিছুটা শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তাই বলে ভাববেন
না অন্যের বলা কোনও কথা ঝেড়ে দিয়ে আপনি আমায় জ্ঞান দেবেন সেটাও আমি মেনে নেব। যে কথাটা
এখনি বললেন সেটা আমাকেই একজন বলেছিল আমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার সময়। আমার সাথে অনেকদিন
কাটিয়ে সে বুঝেছিল শরীর চেনা হয়ে গেছে তার। শরীর ছিবড়ে হয়, আর তারও পাতা ঝরার সময় আসে
একদিন। সে যেটা বুঝতে চেয়েছিল সেটা তার নিঃসঙ্গতাকে। অনেক খিদে, অনেক তেষ্টা, অনেক
কামনার ঢেউ পার হয়ে তার মনে হয়েছিল, যাকে সে খুঁজছে তাকে সে আজও পায়নি।
ফিওদর এই কথায় কিছু বলেনা। চুপ
করে মাথা নাড়ে। একটু থেমে বলে, মাল্যবান, মনে হয় তুমি ঠিকই বলেছো। আমারই ভুল হয়েছিল।
এটা কোন শতক মাল্যবান? আসলে আমাদের সময়ে আমরা তখনও সত্যটত্য নিয়ে মাথা ঘামাতাম। তোমাদের
সে সবের প্রয়োজন নেই আর। হয়ত এমন একটা দিন আসবে যেদিন খিদে, তেষ্টা, কামের চরিতার্থতা,
এসব নিয়ে আর ভাববেই না কেউ! আচ্ছা, তোমার সেই সঙ্গিনী কাকে খুঁজতো বলে তোমার মনে হয়?
মাল্যবান মাথা নামিয়ে কি যেন ভাবে।
তারপর বলে, জানিনা, হয়ত সেই মেয়েটাকে খুঁজতো, যে আনমনে স্কুল থেকে ফেরার পথে পায়ের
কাছে পড়ে থাকা শিউলি কুড়িয়ে নিত। ভরে রাখত ইস্কুল ব্যাগে। তখন কেউ ডাকলেও তার কানে
যেত না।
ফিওদর কি যেন ভাবেন। বলেন, তার
কথা লেখ না কেন তাহলে? রিয়া কে যখন করছিলে তখন তার কথা মনে পড়ল না কেন তোমার?
আপনি পারবেন লিখতে? মাল্যবান রাগত
স্বরে উত্তর দেয়।
চেষ্টা করতে পারি। ফিওদর বলেন।
তারপর উদাস ভাবে তাকিয়ে থাকেন কাফের দরজার দিকে। আপনমনে বিড়বিড় করেন, আমার শরীর আমার
দেশের কথা বলে। আমার শরীর…
মাল্যবান কে বলেন, আমায় একশটা
টাকা দিতে পার? রুটি আর মদ কিনতে হবে।
রাতে বাড়ি ফিরে এই লেখাটা লেখেন ফিওদর।
‘কিছু যে বুঝবে তার সময় কোথায়।
তার আগেই ঘন অরণ্যের পথে পা রাখার মতই, তার হাতের সবকটা আঙ্গুল মাল্যবানকে ধরে রেখে,
আলতো চাপে, আর সেই চাপের নরম উত্তাপের স্পর্শেই কি না কে জানে, মাল্যবানের প্রত্যঙ্গ
আরও টানটান, আরও স্ফীত, আরও কঠিণ, শক্ত আর দৃঢ হয়ে উঠছিল বলেই বোধহয়, সে যখন ডান হাতের
আঙ্গুলে শক্ত করে ধরে তার তলপেটের সামান্য নীচে, নিজের দুই উরু ফাঁক করে, অন্য হাতে
মাল্যবানের থাইয়ের ওপর ভর রেখে, নিজেরও ভার সামলে, নিজের বুনো ঝোপে ঢাকা গহীন অরণ্যপথের
আড়ালে যে গুহামুখ আছে তার সামনে নিয়ে আসছিল তাকে, সেই মুহূর্তে কী হয় বলা অসম্ভব, তবু,
কোনও অস্পষ্ট তলদেশ থেকে উঠে আসা বোধ দিয়ে মাল্যবান টের পায় গুহাকন্দরটি পর্যাপ্তের
থেকে বেশি ভিজে আছে, শুধু ভিজে নয়, যেন পৃথিবীর আদিম সোহাগরস নিজেকে সামলাতে না পেরে,
অথবা সামলাতে না চেয়েই বোধহয়, নিজের সহস্রধারায় প্লাবন এনে গড়িয়ে নামছে দুই থাইয়ের
পথ বেয়ে, আর মাল্যবানকে সেই সিক্ত গৃহমধ্যে টেনে নিচ্ছে এক ভয়ঙ্কর প্রবল টানে। আর প্রবেশের
আগে, ক্ষণমুহূর্তের জন্য ,তাকে দাঁড় করিয়ে রাখছে
সেই কন্দরপথের সম্মুখে, আর যখন মাল্যবানের ছোবল উদ্যত ফণাটি থরথর করে কাঁপছে
তখন তাকে টেনে নিচ্ছে নিজের অরণ্য ঘেরা প্রবেশ পথে, কী অপার্থিব আলোড়নে। মাল্যবান প্রবেশ
করছে এই পৃথিবীতে। স্মৃতি নয় শুধু, যে স্মৃতি সব স্পর্শ, গন্ধ, স্বাদ, আর এই সবকিছুর
উৎস থেকে উঠে আসে, সেই স্মৃতির উৎসের ভেতর মাল্যবানকে আর নিজেকেও উজাড় করে মিলিয়ে দেবার
আহ্বান যেন তার, আজ এই শরীরের উৎসবে। এখানে, এই শরীরে্ ঘর তার। এখানে তার স্বদেশ।‘
লেখাটি শেষ করেন না ফিওদর। রাত বাড়ে। শহর নিঝুম হয় আরও। পাতাটি
খুলে রাখেন তিনি। তিনি জানেন, মাল্যবান ফিরে আসবে কোন একদিন, লেখাটিকে সম্পূর্ণ করবার
জন্যে।
No comments:
Post a Comment