Wednesday, September 25, 2019

সম্পাদকীয়





মেনে নিচ্ছি। আপনিই একমাত্র। একমেবাদ্বিতীয়ম। বিশ্বের প্রথম এবং শেষ কবি। আপনার অঙ্গুলিলেহনেই নির্ধারিত হয়েছিল ব্যাসদেবের ভবিষ্যৎ। আপনার পছন্দই শেষ কথা। আপনার পাঠ-প্রতিক্রিয়াই কষ্টিপাথর। কে সোনা আর কে ঝুটো সোনা, তা একমাত্র আপনিই বলে দিতে পারেন। এক পংক্তি পড়েই বা সবচেয়ে ভালো হয় না পড়েই আপনি নিদান দিতে পারেন ইনি কবি নন বা ইনি কবি। আসলে ব্যাপারটি হল, আপনার মতো কবি বা লেখকের সংসর্গই আসল কথা। সঙ্গদোষ না থাকলে তো আপনার প্রসাদ থেকে বঞ্চিত হবে সেই কবি বা লেখক। কিন্তু যাঁরা আপনার নেকনজরে, তাঁরা পায় আপনার সর্বগ্রাসী প্রতিভার বিচ্ছুরণ। সেই আলোয় তাঁরাও আলোকিত হন। আপনিই সূর্য। বাকি সব চন্দ্র। আপনার আলোয় তারা আলোকিত। আর আপনার আলো? সে তো স্বয়ম্ভূ। সে তো নিত্য ছন্দের তরঙ্গ। সেই তরঙ্গই তো নির্মাণ করে আপনাকে।

আপনিই পারেন বুঝে নিতে কারা কারা লেখার যোগ্যতাহীন আর কারা কারা যোগ্য। আপনি ইতিহাসের সর্বস্ব প্রান্তকে নির্মাণ করেন নিজ হাতে। আপনি সময়, আপনি কবি, আপনি ঈশ্বর এবং আপনিই সমালোচক। আপনি যদি বলেন কেউ কবি, তবে সে কবি। আপনি যদি বলেন কেউ অকবি, তবে সময়েরও সাধ্য নেই তাকে কবি করে।

মেনে নিচ্ছি, আপনি এক। 'বহু'-র সমস্ত বৈচিত্র আসলে মায়া। যেমন সব রঙ মিলেমিশে সাদা হয়ে যায়, তেমন আপনার সমস্ত বহু মিলেমিশে আপনার মধ্যেই এক হয়ে যায়। আপনি বিচারক, আপনি আসামী, আপনিই মহাকাল আবার আপনিই আলো। অন্ধকার আপনার মধ্যেই মিশে গিয়ে বিলীন হয়ে যায়। আপনি মৃত্যুকে ভয় পান না, কারণ জানেন, আপনিই স্বয়ং মৃত্যু। বিলীন তো আপনি নিজের মধ্যেই হচ্ছেন। আর সৃষ্টি হচ্ছে আপনার নতুন আপনি।

আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। আপনার নিদান, পছন্দের সোচ্চার ঘোষণা এবং বিচারের কর্কশ আত্মপ্রচারের আলো থেকে বেরিয়ে আমরা প্রমিথিউসের মতো সামান্য হলেও বিদ্রোহী। আমরা এক নয়, বহুতে বিশ্বাসী। আমরা সত্য নয়, সত্যের বিভিন্ন স্তরে বিশ্বাসী। আমরা মনে করি সমস্ত কিছুই জায়মান, পরিবর্তনশীল, বহু এবং মহাসময়ের সামনে নতজানু। আমরা অবিনশ্বর নই।
আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন হে কবি, মেনে নেব, সমস্তই, শুধু একটু শান্ত হোন।

এসেছে উৎসবের মরশুম। এক কদর্য আত্মঘোষণা এবং কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ম্বরে নিজের দীনতা প্রকাশের এক সময়। প্রকৃতি যেমন উৎসবমুখর, তার ছিটেফোঁটা নেই মানুষের মধ্যে। প্রকৃতি এই সময় বহুকে আপন করে মিলনে ব্যাপৃত। তার সুরে প্রতিধ্বনিত হয় নিরভিসন্ধির ছন্দ। কিন্তু মানুষের সমাজ আর প্রকৃতি বড় বিপরীতমুখী হয়ে চলেছে। একদিকে ফ্যাসিবাদ তার হিংস্র দাঁতনখ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আর অন্যদিকে দেখতে পাচ্ছি, কদর্য সংস্কৃতির নানা রূপ। অগ্রজ শিল্পী ঊর্মিমালা বসুকে নিয়ে ফেসবুকে যে নিম্নরুচির ফ্যাসিস্টরা আক্রমণ করল, আমরা তার তীব্র নিন্দা করি। এর শাস্তি অবশ্যই সময় তাদের দেবে। কিন্তু সময় নিজ হাতে ঘাতক নয়। মানুষ, সময়ের হাতিয়ার। মানুষকে মাঝেমাঝে সময়ের দূত হয়ে যেতে হয়। যাদবপুরের অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ছাত্র-আন্দোলন আরও রূপ পাক। তাঁদের সমর্থন করি।

মৌলবাদের এই সামগ্রিক আবর্তের মধ্যে বহুত্ববাদের উপাসনা করা খুব কঠিন। কিন্তু আমরা এই বহুত্ববাদকেই, ধারণ করতে চাই আমাদের সমস্ত কাজে। আমাদের একটা কথাই ঘোষণা করার। আমাদের কোনও ধর্ম নেই। ইতিহাস রয়েছে।
আমাদের কোনও একমেবাদ্বিতীয়ম কবি বা রাজা বা শাসক নেই।
আমাদের রয়েছে বহুস্তরের, বহুস্বরের এক পৃথিবী।
আমাদের কোনও তথাকথিত সত্য নেই।
রয়েছে আধ্যাত্মিকতা। এমন এক সংযোগ, যা মানুষকে ছড়িয়ে দেয় অজস্রে।

এ পৃথিবী মৌলবাদ মুক্ত হোক। অশুভশক্তি ধুয়ে মুছে যাক। মানুষ সহিষ্ণু হোক। আত্মদীপ জ্বলে উঠুক নিভৃতে।

ভালো থাকুন।



সম্পাদকমণ্ডলী- বেবী সাউ হিন্দোল ভট্টাচার্য মণিশংকর বিশ্বাস সন্দীপন চক্রবর্তী শমীক ঘোষ




যোগাযোগ- abahaman.magazine@gmail.com

জয় গোস্বামী





আশ্রম 

হেরে যাওয়া আলো সর্বজিৎ
থাকোমণি চূড়ার শিকল
অন্ধকার গা দেখায় ভালো
কোথায় গড়িয়ে যায় কোথাকার জল

তৈরি করো দল
আশ্রমের নাম দিয়ে দল তৈরি করো
সে কবে রবীন্দ্রকাল থেকে
আশ্রমের ছদ্মবেশে দল গঠন হয়

হেরে যাওয়া আলো সর্বজিৎ
থাকোমণি চূড়ার শেকল
স্নান করলে গা ঢাকে না জল
সব দেখা যায় এহে সব দেখা যায়

দল দেখা যায় ছবিলীলা
সাবলীল এককাট্টা দল
আমাদের অনুমতি ছাড়া কেউ ঢুকতেই পারবে না
সব ধরা যায় এহে সব ধরা যায়

এল কত সন্ন্যাসীরা জটাজুটধারী
তপোবনে দু ঢোক বিশ্রাম
একবোতল বিশ্রামে কেউ কেউ
নিমগ্ন, টলায়মান পা

ঋষি নামে তপস্বী নামেও
বেঁচে থাকে দল
আশ্রম সম্বল
হেরে যাওয়া আলো সর্বজিৎ
থাকোমণি চূড়ার শেকল

দর্শক দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে
কোথায় গড়িয়ে পড়ে কোথাকার জল...

গৌতম বসু















সুকুমারীকে নাবলা কথা

                ৷৷  ৷৷ 

আমায় বুঝায়ো না কিছু,  একটি বাক্য শুনায়ো না আর,
সমাপ্তিরেখায় টেনে নিয়ে গিয়ে বেঁধে রেখো না শরীর ;
ঝড় উঠেছে সহসাধীবরকন্যারা ফেরে নি এখনও,
ঘরে আলো জ্বালাবনা এমনই জ্বলে থাকবে অন্ধকার?     

আলো জ্বালাব না ঘরেকেবলই জ্বলে থাকুক অন্ধকার,
যারা এখনও ঘরে ফিরে আসো নিখঞ্জ পাঁচালীবিক্রেতা,
রান্নাঘরের পিঁপড়েগণডাক দিয়ে যাই তোমাদের,
বলি,সাবধানবিছানো রয়েছে , ঝড়ের মাত্রাজ্ঞান!  

কোন্‌ আলো আবার জ্বালাবে বলে এসেছিলে সুকুমারি,
এর অন্য এক অর্থ রয়েছে জেনো, আলো নিভেও যায় ;
যা নেভে,না-বলে চিরতরে নিভে যায়আপন খেয়ালে,
দেবী সাফো-র অবোধ্য লিখনমালার মতো নিভে যায় ৷৷
                                                                                                    
             ৷৷ ২ ৷৷

তুমি তারে দেখেছিলে কি না বোঝা দায়লাল মেঝে চুপ,
জলের ছাপ শুকায়তারা দেখেছিল কি নাবোঝা দায়৷
বৃক্ষসমাজে আমি তারে খুঁজেছিলাম কি নাবোঝা দায়,
আমি চক্ষুষ্মান কি নাপ্রশ্ন ঘিরে পাখি সব করে রব।

একটা পুরাতন বছরের উদরে গিয়ে পড়লাম,      
হাঁপালাম হাপরের মতোচিঁহি স্বরে কত ডাকলাম,
হাতেপায়ে বেড়ি,তবু সামান্য চেষ্টায় গা এলিয়ে দিয়ে
দেখলাম,পুনরায়  সন্ধ্যা নামছে ইছামতীর কোলে ৷

আকাশ আরও কালো করে ঘরে ফিরছে ব্যস্ত পক্ষীকু্ল৷   
কেবল একটা দালান আমাদেরছোট্ট দুটি ঘর;
সিঁদুরকৌটার নীচে একা ঘুমায় আমার চিরকুট,
আমি কী-কী পারি নিমনে রাখার চেষ্টা করিসুকুমারি৷৷   


পূবালী রাণা





দেখছি

আমার আকাল ও অনাহারের স্তনবৃন্ত ! শব্দের পরতে পরতে মুছে যাওয়া শিশিরের ঘ্রাণ ও নীলসুধা এখন পান করছে । কোনও এক প্রাচীন যাদুকরের মোহময়ী যাদুর স্পর্শে বিলুপ্ত নগরের মতো তুমি হারিয়ে গিয়েছ , বহুযুগ আগে । হারিয়ে যাওয়ার রক্ষাকবচ তোমার ব্যক্তিগত সম্পদ । বুভুক্ষু কাপালিকের কমন্ডুলের জল তাকে রক্ষা করতে পারে না খিদে থেকে , তেমন আমার আত্মমগ্নতা আমাকে রক্ষা করতে পারছে না এখন। 

ভোরের শিশিরের মতো মতো একটা জন্ম পেয়েছি , বাকিসব জোয়ারের জল । এসেছে , চলেও গিয়েছে । কবির রূপকের মতো আমি বিষ ও অমৃত নিয়ে মেঠোপথে হাঁটছি । আবর্তনের নিরিখে পিছিয়ে পড়ছি । পুরুষের দিগ্বিজয়ের কাছে পরাজিত হচ্ছি । কাটা ঘুড়ির দিকে দৌড়চ্ছি , চিৎকার করে বলছি - সুতোহীন এই ওড়াটাই তোদের স্বাধীনতা ।

ক্লান্ত , ক্লান্ত হয়ে সবুজ আলে শুয়ে পড়েছি । আমার বুকের উপর দিয়ে চলে গেছে আলকেউটে কামড়ায়-নি কেন ভেবে আশ্চর্য হতে হতে থেমে গেছি ... 
তবে কি আমাকে এখনও ভয় পায় বিষদেঁতোরা ! তখন পূর্বকোণে সূর্য জেগেছে কিশোরীর বেণীর মতো । চাষারা লাঙল কাঁধে মাঠে আসছে ।ভূমিকর্ষণের পর্ব এবার । মাটি'রা ক্রমশ জননী হয়ে উঠছে ... দেখছি ...

Tuesday, September 24, 2019

বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়






তাড়কা রাক্ষসী

জলকিত শবাধারে যদি শুনি কৃতান্তের হাসি
ঈশ্বর শঙ্কিত হন,এক মাতা
দুই পুত্র দোষী
তার মানে তুমি আছো
পুরাণের তাড়কা রাক্ষসী।
উচ্চকিত তোমার বৈভব
জলে ভেসে যায় কার শব!

তীক্ষ্ণ বিভাজিকা আর পায়ু মরীচিকা
চেটে খাও অনাঘ্রাতা
উদ্যান বালিকা।
মৃত্যু তবু নির্ধারিত, অকারণ রক্তে করো স্নান
দানব  হত্যার পর ধ্যান গ্রন্থে খলিল জিব্রান..



টি ভি যুদ্ধ

টিভি শো য়ে পরাজিত , যদি ফিরে আসি?
ফের করি সুন্দরের স্তব,
নীলিমার সঙ্গে যদি জুড়ে দিই/একান্ত অর্ণব?

গণিকা রা যদি হাঁটে, সাবলীল,মণিকর্ণিকায়
ভিখারিরা কাগজের তরণী  ভাসায়...
পতাকা মিনারে বসে গান গায় কোহেন,সীগার
তার মানে, তুমি নেই আর।


সেপাই

তোমার রহস্যে আমি ঘনশ্যাম হাতটি রেখেছি
যে হাত বাঁশি তে বাজে
মন মোর মেঘ সুরে গায়
আমার হৃদয়ে নাচে 
দুটি মাত্র হৃদকম্প তার
আমার সকল ইচ্ছা ভাদ্রমাসে তোমা পানে ধায়।

শোনো ওগো ক্ষেত্রনারী তুমি নাকি কবিতা ও লেখো?
নৈঃশব্দ্য কুহকে ভরো অক্ষরের সব অলঙ্কার
তোমার কপাট খোলা, লোকে বলে নরকের দ্বার
সুগন্ধি মৃগীর মতো সুবাসিত নম্র তটরেখা...
 তোমার খাঁচার পাশে উড়ত যে বালিহাঁস দুটি
বর্ষা র আকাশ পেয়ে নাবিকের মতো ভাসে যারা
যে হাত বাঁশিতে বাজে,ঐ হাতে পাঠাও ইশারা
তোমার খাঁচায় যেন এক রাত্রি থাকিবারে পায়।

নিজেকে পাঠাই তবে, এই প্রশ্নে সাড়া নাহি পাই
তোমার রহস্যে আমি তালকানা সামান্য সেপাই।






রাহুল পুরকায়স্থ





ভ্রমবাতায়নে

কে জাগে, কে জেগে আছে?

সারারাত রাতের ভিতরে
আলো আর আমি

অন্ধকার জুড়ে
অন্ধ আলো দিগন্তে ছড়ায়

আগুনের ঝাউবনে কারা দৌড়ায়!

জলে নৌকা দুলে ওঠে
জলে আলো দুলে ওঠে
আলোকে আলোক চমকায়

কার নাকছাবি!

হারিয়ে গিয়েছে যে যে আলো
তারা যদি ফিরে আসে

কী হবে, কী হবে তবে, ভাবি


চৈতালী চট্টোপাধ্যায়





ব্ল্যাক কফি

মন রাখি মনের উপর।
এমন রিস্কি গেম, হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ি।
আবার মন লাগাই।এসো,
সার্কাস-সার্কাস খেলি।
মনের উপর মন।
তাঁবুতে গুপ্তশত্রুতা।
নিষ্ক্রিয়তা।
যেরকম হয়।
অত উঁচু থেকে, মন,  ঘাড় গুঁজে পড়ে গেলে, স্রেফ মরে যাবে।
মন মরে গেলে তারপর,
জোকার ফুরিয়ে যায়।
শরীর পেনড্রাইভ হয়।


পুড়ে-যাওয়া জিভ,আর,
ফুটে-যাওয়া ভয়,
সার্কাস ফেলে,
এবার মুখোমুখি বসছে
তেতো, বিস্বাদ, একটা
ব্যর্থ বিকেলে


সুমন গুণ







মাংসল

তোমাকে দেখার আগে মনে হতো দূরে আছো, পরিসরে আছো।
 এখন কিছুটা গিয়ে  টের পাচ্ছি তোমার বাহুর
নিচে ঘন কলরব ,ঊর্ধ্ববাহু রোম।

মাঝে মাঝে মনে হয় সবাই তো সুখে আছে, গৃহবন্দী আছে।
 চারপাশে চেনা জল, চেনা অংক, চেনা ত্রাণ, চেনা বিজ্ঞাপন।
 এটা কি সংগত ঘেরাটোপ পার হয়ে আরো গভীরে যাবার?
গেলেই আক্রান্ত হব, তাক করে ছুড়ে মারবে  সফল বন্ধুরা,
 তুমিও বিভ্রান্ত হবে, ভাববে, যে এসেছিল কৃতাঞ্জলিপুটে,
এখন সে কেন এত অধৈর্য? শুধুই
 মাংসের আহ্লাদ নিয়ে তৃপ্ত হতে চায়?

এইসব ইচ্ছে নিয়ে, অবসাদ নিয়ে বেঁচে থাকি।
মাঝেমাঝে সবভুলে ঝাঁপ দিই, একবার দুবার
সর্পিল লাবণ্য নিয়ে উঠে আসে জলের রমণী, তাকে পান করে
 সাময়িকভাবে শান্ত হই

পার্থজিৎ চন্দ














বিষ
কোবাল্ট-আকাশ থেকে জন্ম নেওয়া অনিবার্য ঘাতক আসলে হিমরাক্ষস

ছিন্নভিন্ন, শঙ্করমাছের রক্ত শুষে নিচ্ছে বালি ও সমুদ্র
নুন ও রক্তের মাঝখানে ঘোরাফেরা লাল-কাঁকড়ার গায়ে ছায়া পড়ে আছে
কোবাল্ট রঙের। দূর ড্রাই-ডক থেকে আরও দূর
নির্জণ জেলেবস্তির পাতার দেওয়ালে কোবাল্ট-বর্ণ
চেটে খাচ্ছে হিমরাক্ষস

এক ফলসার বনে কোবাল্ট-প্রহর ঘনিয়ে উঠেছে

এক রাক্ষস-শিশুর দাঁতে ছিঁড়ে নেওয়া স্তনবৃন্ত কোবাল্ট রঙের

ধাতুছায়াপথে ... রক্তগঙ্গায় হিমরাক্ষস এই সব দেখে
তারপর চুপচাপ সমস্ত মায়ের দুধে কোবাল্ট রঙের বিষ ভরে দেয়


রক্ত

প্রতিভাদেবতার কার্পণ্য নেই, তাই
অসম্ভব তেজস্ক্রিয়তার দিকে অ্যকোয়ারিয়ামের আলো জ্বলে ওঠে

তোমার দু’হাতে ইচ্ছামৃত্যুভার; দু’পায়ে ঘোড়ার উড়ান

স্যানেটোরিয়ামে উন্মাদ রেখে নেমে আসছে
পুরানো-মডেল গাড়ি (সে-উন্মাদ ক্যানভাসে নিজের দু’চোখ গেঁথে দিয়েছিল)
গাড়িটির গায়ে ছায়া ফেলে আছে দীর্ঘ পাইন

দিন দিন তোমার প্রতিভা আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশগামী

কেশর দেখেই বোঝ কোন ঘোড়া জ্যাকপট দেবে

শুধু রেসকোর্সের ধারে মাথা গুঁজে বসে
মাঝে মাঝে দেখ এ-মাঠের নীচে কালো গহ্বর
নিভে আসা খুরের শব্দ
অন্ধকারে শুয়ে থাকা এক বদ্ধ-উন্মাদ
পুরানো সিরিঞ্জে নিজের রক্ত ভরে ছিটিয়ে দিচ্ছে
তারাভরা আকাশের দিকে 

দোতারা

হরিণ-চোখের মতো এ-বিকেল সুন্দর
যার হাতে রক্ত লেগে আছে সে আমায় হত্যা করেনি

যে আমায় হত্যা করেছিল
তাকে আমি চিনি। তার হয়ে সাক্ষ্য দিতে আসি
বারবার; আসমান থেকে দোতারা নামাই
শুধু একটি সুর। তারপর

আর কিছু নেই

স্তব্ধ চরাচর

হরিণ-চোখের মতো এ-বিকেল সুন্দর





অর্ণব রায়





বিস্মরণ, ঢেউ

মুছে যাও কালচক্রে কয়েক বছর
মুছে যাও সংলগ্ন প্রাণ মুছে যাও বলে ফেলা সব কথা

কাব্য শঠ, অক্ষরের গায়ে অক্ষর বসানোর হিম খেলা, খেলাই
ওতে প্রাণ নেই। ভরসা করে মাথা রাখতে গেলে
জগতের উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দোষ লাগা সব অঙ্গ,ভয় দেখায়,
আকাশে উর্দ্ধমুখে হাহাকার পান করে—

ক্ষমা ছোঁড়াছুঁড়ি করে কারা বেঁচে থাকে?
কারা সব কিছু ভুলে যাওয়া অভ্যেস করে রোজ সকালে উঠে,
নিষ্ঠাভরে শ্বাস নেয়,
             ততোধিক ভক্তিভরে শ্বাস ছাড়ে গুনে গুনে

পরস্পর ছিঁড়ে গিয়ে আমাদের যা বোধ হল—
পৃথিবী তাকে শিক্ষা নাম দিলেও
আমি তাকে ব্যাথা অবহ নাম দিলেও
তুমি তাকে উপায় বা অভিসন্ধি বলতেই পারো—

কেননা আমাদের প্রতিটি যৌথকর্ম কাঁচ বাঁচিয়ে হাঁটা
তাই আমাদের রমন এত অনিশ্চিত, সুফলা হয়ে যাওয়ার ভয় পায়ে পায়ে
কেননা আমাদের পরস্পরকে জানা হোটেলের ঘরের মত;
তাই আমাকে বীজবিন্দু ধারণ করতে হয়,
                    তুমি চুম্বনকালে ওষ্ঠ ঢেকে রাখো

নারীতে প্রবেশ আসলে একাধিক ধোঁকার স্তর স্তর অন্ধকার যার প্রান্তদেশে কিছুই স্পর্শ করার নেই ও পৃষ্ঠদেশ পুরোটাই আঢাকা

                           অথবা

নারীতে প্রবেশ সমুদ্রে যাওয়ার মতই, স্নান থেকে ফিরে আবার স্নান করতে হয়

— এরকম সব বোধ চোখ জ্বেলে বসা অন্ধকারে গুমোটে নোনা বাতাসের ধারে একশো – একশো কুড়ি দরে সাজানো। আমাদের পায়ে পায়ে গরম শুকনো বালি ঠেলে ঠেলে ফিরতে হবে

কে বলে সমুদ্র অপার!
এই যে বালির শিশু ঢিবি
আঁজলায় খোঁড়া জল
তাতে ফুঁ দিলে ঢেউ এল
এটুকুই সমুদ্র।
চোখের পরিধি বাড়ালে যে জলের পাহাড়
কালো দিগন্ত,পাথরে আছড়ে পড়া ফেনাময় ভয়—
তা অন্য কারও
তা আমাদের না

শোনা যায় দীর্ঘ দুবছর তিনি ব্যাথা ধরে রেখেছিলেন। দীর্ঘ দুবছর আসন্ন প্রসব আটকে অন্তস্থ ভ্রুণের সাথে কথোপকথন লিখে রাখছিলেন। সেই লেখা এতই মহান ও তিনি যে এরকম লিখছেন সেই রটনা এতই মাহাত্ম্য পায় যে শিশুটির শেষ পর্যন্ত কি হল কেউ খবর রাখে না, এমনকি তিনিও অন্যতর মহানতার চাপে তার কথা ভুলে যান। প্রসবে আটকে থাকা প্রাণ, মরে না, কিন্তু না ভ্রুণ থাকে না ভূমিস্পর্শ করে শিশু হয়ে ওঠে। মরণের অধিক সেই দ্বন্দ্ব জমাট বেঁধে তার অদৃষ্ট হয়।

সৈকত বরাবর কররেখা চলে গেছে
তুমি বিরাটের নেশায় নেশায় জলের দিকে যাও
তীরে সুফল একহাতে ধরে রেখে— আমি দেখি
ঢেউ তোমাকে একবার করে নিয়ে যায়
তুচ্ছ ভেবে হেসে হেসে আবার ফিরিয়ে রাখে—
ভেজা বালুতে আঁচড়ের উপমায় কিছু যেন লেখা হয়েছিল খেলাচ্ছলে
জগতের জোয়ারের জলে নিশ্চই মুছে গেছে পরদিন

জগত আড়াল হল। আমরা পূর্বাভাষেই হোটেলে আড়াল নিলাম। মৃত লাল কাঁকড়াটিকে আমরা সঙ্গে করে এনেছি। বা কাঁকড়াটি রয়ে গেছে সৈকতেই। আমরা তার লুকোনোর ব্যর্থতাটুকু এনেছি।
 কে তোমায় খুঁজতে বেরিয়ে আর ফেরেনি। আমি জানি ক’টাদিন পরেই তুমি আবার আসবে। কয় দিনের জন্য। এই-ই সত্য। ঝাউবন আমাদের সন্ধ্যে ঘনানো দেখেছে। অন্ধকার মোহনার থেকে শুধু শব্দ  শুনে আমরা ফিরে এসেছি— শাদা আবছা ছায়াপথ ওই দূর গর্জনের কাছে তোমার হৃদয়ে ঢুকে গেছে। ড্রাইভার ফিকে হেসে বলল, যান, দেখে আসুন।   

             হৃদয়ে পাপ ঘনায়।
             কার দেহ গৃহচাপা দিয়ে এসেছি!
             বাহারি ঝিনুকের সাথে কার টুকরো আঙ্গুল
             সংগ্রহে উঠে এল !আমাদের অপরাধ হয়।
             সুখ পেলে আমাদের অপরাধ হয় গো,
             সুখ না পেলেও কি তা অপরাধ নয়!   

একটা ছোট, পরেরটা তার চেয়ে বড়ো, এভাবেই আসে,
পর্যটকে ঢেউ বলে, আরও আরও ভেতরে গিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলে—
আমরা জানি, সমস্যা, তার পেছু পেছু তার চেয়েও বড়ো
                                      সমাধান নেই

ভালো থাকা, সে কি জলকণা!
অল্প আঁচেই ওষ্ঠে চড়া পড়ে, কন্ঠার দীনতা প্রকট হয়ে
জগতের সামনে চেঁচাতে থাকে, একান্ত বালির দূর্গ সুখের দিন,
আর অশান্তির তুলনা কেবল জোয়ার

অতঃপর সামান্য সুখের আশ্বাসে বিস্মরণ সৃষ্টি হয়,
আগের ঢেউ ভুলে যাওয়াই আসলে পরের ঢেউ—
এরকম পঙক্তি আসে, নিজেকে থেকে থেকে বাহবাও আসে,
সামান্য সুখের কথাতেই সব লেখা মুড়িয়ে আসে আপাততঃ